এসি দুর্ঘটনা এড়াতে যেসব তথ্য জানা অত্যন্ত জরুরি

এসি সার্ভিসিং এক্সপার্ট দুলাল দাস বলেন, ‘বছরে অন্তত একবার পেশাদার টেকনিশিয়ানের সাহায্যে এসি সার্ভিসিং করানো উচিত। বিশেষ করে শীতের সময় দীর্ঘ কয়েকমাস বন্ধ থাকার পরে গরমের আগে আবার চালু করার আগে অবশ্যই সার্ভিসিং করে নেওয়া উচিত’

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে এয়ার কন্ডিশনার বা এসির ব্যবহার যেমন বাড়ছে, তেমনি এসি বিস্ফোরণের ঘটনার কথাও শোনা যাচ্ছে প্রায়ই।

ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা ও গাজীপুর মিলিয়ে ২০১৯ সালেই অন্তত পাঁচটি এসি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। যারমধ্যে অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন অন্তত ২২জন। খবর বিবিসি বাংলা।

নিম্নমানের গ্যাস আর প্রতিযোগিতার বাজার

ঢাকার গুলশানে একটি এসি সরবরাহ ও সার্ভিসিং প্রতিষ্ঠান পরিচালনাকারী দুলাল দাস জানান, ”বর্তমানে এসিগুলোয় যে গ্যাস ব্যবহার করা হয়, সেই গ্যাসে সহজে আগুন ধরে যায়। ফলে কোনও কারণে সেটি লিক হয়ে জমে থাকলে, সেখানে বৈদ্যুতিক কারণে আগুনের স্ফুলিঙ্গ তৈরি হলে বা ম্যাচের কাঠি জ্বালালে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে পারে।”

তিনি জানান, ”প্রতিযোগিতার বাজারের কারণে অনেকে চীন থেকে অত্যন্ত কম মূল্যে নিম্নমানের জিনিস দিয়ে তৈরি এসি এনে বাংলাদেশের বাজারে বিক্রি করছে। এমনকি অনেকে এসব এসির গায়ে নামি ব্রান্ডের স্টিকার লাগিয়ে বিক্রি করছে। এসব এসির গুণগত মান খারাপ হওয়ায় সহজেই দুর্ঘটনার কবলে পড়তে পারে।”

এসি দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণসমূহ:

#) অনেক পুরনো বা নিম্নমানের এসির ব্যবহার

#) রুমের আকার অনুযায়ী সঠিক ক্ষমতার এসি ব্যবহার না করা

#) কম্প্রেসরের ভেতরে ময়লা আটকে জ্যাম তৈরি হওয়া

#) এসি থেকে গ্যাস লিক হওয়া এবং সেটি রুমে বা এসির ভেতরে জমে থাকা

#) দীর্ঘক্ষণ টানা এসি চালানো, যার ফলে এসির প্রেশার বেড়ে যায় এবং সেটিকে গরম করে তোলে

#) এসির ভেতরের বা বাইরের বৈদ্যুতিক তার নড়বড়ে হয়ে থাকা, যা শর্টসার্কিটের তৈরি করতে পারে

#) বৈদ্যুতিক হাই ভোল্টেজের কারণে ইলেকট্রনিক যন্ত্রের ওপর চাপ তৈরি হওয়া

#) অনেকদিন এসির সার্ভিসিং না করানো

#) বজ্রপাত বা বৃষ্টির সময়ে এসি চালানো ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ ভালো আর্থিং ব্যবস্থা না থাকলে এটিও এসির দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে।

যেভাবে দুর্ঘটনা এড়ানো যেতে পারে:

বুয়েটের অধ্যাপক অলোক কুমার মজুমদার বলছেন, অন্য যেকোনো বৈদ্যুতিক যন্ত্রের মতো এসিরও বিশেষ যত্ন নেয়ার দরকার আছে। প্রতিমাসে ফিল্টার পরিষ্কার রাখা, বছরে একবার অন্তত পুরো যন্ত্রটির সার্ভিসিং করানো, আউটডোর ইউনিট পরিষ্কার রাখতে হবে।

এসি সার্ভিসিং এক্সপার্ট দুলাল দাস বলছেন, ”বছরে অন্তত একবার পেশাদার টেকনিশিয়ানের সাহায্যে এসির সার্ভিসিং করানো উচিত। বিশেষ করে শীতের সময় দীর্ঘ কয়েকমাস বন্ধ থাকার পরে গরমের আগে আবার চালু করার আগে অবশ্যই সার্ভিসিং করে নেওয়া উচিত।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসি দুর্ঘটনা এড়াতে কয়েকটি বিষয়ের দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

#) পেশাদারদের মাধ্যমে নিয়মিত সার্ভিসিং করানো

#) রুমের আকার অনুযায়ী সঠিক মাত্রার এসি নির্ধারণ

#) নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ডের এসি কেনা

#) দীর্ঘসময় একটানা এসি না চালিয়ে মাঝে মাঝে বিরতি দেয়া

#) বৈদ্যুতিক সংযোগ, সকেট, ফিল্টার নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করা।

#) হাই ভোল্টেজ এড়াতে বাড়িতে সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করা।

#) বৃষ্টি ও বজ্রপাতের সময় এসির ব্যবহার বন্ধ রাখা। এছাড়া বাড়ির ছাড়ে বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।

#) একনাগাড়ে আট ঘণ্টার বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়। এছাড়া আউটডোর মেশিন এমন স্থানে বসাতে হবে, যেন পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করতে পারে।

1 thought on “এসি দুর্ঘটনা এড়াতে যেসব তথ্য জানা অত্যন্ত জরুরি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *